Mariners’ Trivia Zone

Rare picture from 1929 Mohun Bagan Hockey team.

১৯২৯ সালের মোহনবাগান হকি টিমে জয়পাল সিং মুন্ডা (বসে আছেন ডানদিক দিকে তৃতীয়)। উনি ১৯২৮ সালের আমস্টার্ডাম অলিম্পিক্সের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ভারতীয় জাতীয় দলের সদস্য ছিলেন।


 

“Mohun Bagan Ratna” Shyam Thapa with his trademark acrobatic action 

স্বভাবসিদ্ধ দুরন্ত সাইডভলিতে খিদিরপুরের বিপক্ষে গোল করছেন শ্যাম থাপা (সাদা জার্সি)


 

 

Legend Balai Das Chatterjee once introduced Baseball in club

মোহনবাগানে এক বছর বেসবল এবং রাগবি খেলার প্রচলন ঘটিয়েছিলেন ক্লাবের এক বিশিষ্ট খেলোয়াড়-মেন্টর-কর্তা বলাইদাস চ্যাটার্জি। বেসবল খেলার সেই বিরল ছবি রইল “সোনার ফ্রেমে মোহনবাগান” পুস্তক থেকে।


 

Rare picture of Mohun Bagan cricket team from 1900

মোহনবাগানের সাথে সম্পর্কিত সবচেয়ে পুরানো কোন গ্রুপ ছবি। মণিলাল সেন ফুটবল এবং ক্রিকেট উভয় বিভাগেরই প্রথম অধিনায়ক ছিলেন, এই ছবিতে তাঁকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সামনের সারিতে চশমা পরে বসে। পরবর্তী সময়ে উনি দীর্ঘ কয়েক বছর দলের নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। 


 

 

Matinee Idol of Bengal sharing his aura with Mohun Bagan Legend

ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তী ‘পদ্মশ্রী’ শৈলেন মান্নার সাথে মোহনবাগানের অন্ধ সমর্থক বাঙালির চিরকালের ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমার।

 


 

Bagan Legend “Baby Taxi” Arumai Nayagam in action

ছবিতে ‘২০১৪ সালের ‘মোহনবাগান রত্ন’ অরুময় নৈগমকে (ডানদিকে) দেখা যাচ্ছে কলকাতা লীগের একটি ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে রয়েছেন। তাঁর ক্রীড়াশৈলী এবং ক্ষিপ্রতার জন্য মোহন জনতার ভালোবাসায় উনি হয়ে উঠেছিলেন ‘বেবি ট্যাক্সি’।


 

A rare poem on “Mohun Bagan” by notable poet Achintya Kumar Sengupta

 

মোহনবাগান নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক কবিতা, গল্প, গান। সম্ভবত সেই অমর এগারোর কীর্তিকে কুর্নিশ জানিয়ে করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কবিতাই প্রথম। কিন্তু ‘রংমশাল’ পত্রিকার বাংলার ১৩৫১ সালে আশ্বিন মাসের শারদ সংখ্যায় প্রকাশিত প্রখ্যাত কবি এবং সাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের কবিতাটির কথা বোধহয় আমাদের অনেকেরই জানা নেই। রংমশাল পত্রিকা ভারতের স্বাধীনতার পূর্বের কিছু বছর ছাত্রযুব সমাজে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তারই একটি পর্বে মুদ্রিত হয়েছিল অচিন্ত্যবাবুর এই সরস উপস্থাপনা। (তথ্যঋণ – মানস চক্রবর্তীর ‘মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল রেষারেষি’ এবং উইকিপেডিয়া)


 

Those were the days!!! Rovers Cup – a forgotten charm, Dilip saab giving away the trophy, Feb ’73

১৯৭২-৭৩ মরসুমের রোভার্স কাপের আসর বসেছিল ‘৭৩এর ফেব্রুয়ারিতে। কলকাতার আইএফএ শিল্ড, দিল্লির ডুরান্ড কাপ আর বোম্বের রোভার্স কাপ, এই তিন ঐতিহ্যশালী টুর্নামেন্ট ভারতের প্রাক-স্বাধীনতা কাল থেকেই সমস্বরে উচ্চারিত হত এবং ‘ব্লু-রিবন টুর্নামেন্ট’ বলে খ্যাত ছিল। আর রোভার্সের একটা বাড়তি আকর্ষণ ছিল, বলিউডের তাবড় তাবড় তারকা শিল্পীরা হাজির হতেন ঐতিহাসিক কুপারেজ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে তাদের প্রিয় দলকে উৎসাহিত করতে। এসডি বর্মণ থেকে মান্না দে, সুনীল দত্ত থেকে দিলীপ কুমার সব কিংবদন্তীদের ফুটবলপ্রেম থাকত চোখে পড়ার মত। ‘৭২-৭৩এ ঘটেছিল এক অদ্ভুত জিনিস। ফাইনালে মুখোমখি হয় কলকাতার দুই প্রধান মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু প্রথমদিন ম্যাচ অমীমাংসিত থাকার পর ফের রিপ্লে হয়, এবং তাতেও ফলাফল গোলশূন্য ড্র (০-০) থাকে। তখন দুই দলকেই যুগ্মবিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ছবিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দিলীপ কুমার রোভার্স কাপের ট্রফিটি তুলে দিচ্ছেন দুই দলের অধিনায়ক তথা মোহনবাগানের সুকল্যাণ ঘোষ দস্তিদার এবং ইস্টবেঙ্গলের সুধীর কর্মকারের (একদম বাঁদিকে) হাতে। সেই সঙ্গে মোহনবাগান সেই মরসুমেই করে ফেলল প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসেবে রোভার্স জয়ের হ্যাট্রিক, অর্থাৎ, টানা তিন মরসুম ‘৭০-৭১, ‘৭১-৭২, ‘৭২-৭৩ খেতাব ধরে রাখা। বস্তুত, টসে জিতে মোহনবাগানই সেবার পায় প্রথম ছ’মাস ট্রফিটা নিজেদের কাছে রাখার ছাড়পত্র। রোভার্সের ইতিহাসে যুগ্মবিজয়ী বা জয়েন্ট উইনারস্ হবার ঘটনা সেবার দ্বিতীয়। মোহনবাগান অবশ্য সর্বাধিক (চোদ্দ বার)  রোভার্স জয়ের মধ্যে ওই একবারই খেতাবের সাফল্য ভাগ করে নিয়েছে।

Throwback 1985 : 2nd innings of the Diamond Coach in Bagan

 

‘১৯৮৫-৮৬ মরসুমে মোহনাগানের অধিনায়ক ছিলেন সদস্য-সমর্থকদের অত্যন্ত প্রিয় বিদেশ বোস। টিমে ছিলেন বিদেশ, শ্যামল, কম্পটন, সুব্রত, প্রতাপ, মিহির, কৃষ্ণেন্দু , প্রশান্ত, শিশিরদের মত একঝাঁক বাঙালি তারকা, যা আজকের যুগে দাঁড়িয়ে কার্যত অভাবনীয়। ওই মরসুমে আমাদের দলের হাল ধরেন ময়দানের বিদগ্ধ কোচ তথা মোহনজনতার আবেগের এক নামান্তর অমল দত্ত। ‘১৯৭০এর মাঝমরসুমে সরে দাঁড়ানোর পর প্রায় দীর্ঘ পনেরো বছর সেবারই শুরু হয় মোহনবাগানে তাঁর কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস। সাফল্য এনে দেন মোহনবাগানকে ডুরান্ড, রোভার্স চাম্পিয়ন করে, সাথে সিকিম গভরনর্স গোল্ড কাপ। কোন বড় ম্যাচে অবশ্য সেবার জয় আসেনি। একঝলক ফিরে দেখে নেওয়া যাক, সেই ‘১৯৮৫-৮৬ মরসুমের পুরো স্কোয়াড, যেন একটি সুখী পরিবার। দাঁড়িয়ে একদম বাঁদিকে কোচ অমল দত্ত, সামনে বসে বাঁদিক থেকে তৃতীয় বিদেশ বোস। (তথ্যঋণ – অর্ঘ্য চ্যাটার্জি)


 

3 cheers!!! 1st Triple Crown for Mohun Bagan – Sensational ’77

 

কোন ভাগ করা খেতাব নয়। কেউ বলতে পারবে না, দেড়টা কি দুটো জিতেই তিনটে বলে চালাচ্ছে। এককভাবে প্রথম ত্রিমুকুট বা ট্রিপল ক্রাউন জেতার অহঙ্কার একমাত্র মোহনবাগানই দেখাতে পারে। কলকাতা ময়দান তো বটেই, তামাম ভূভারতে এই কৃতিত্বের একমাত্র দাবিদার জাতীয় ক্লাবই। ‘১৯৭৭-৭৮ মরসুমে মোহনবাগানের দলনায়ক ছিলেন ‘ঘরের ছেলে’ সুব্রত ভট্টাচার্য, সবুজ মেরুন জনতার বাবলু দা। আর কোচ ছিলেন দেশের সর্বকালের অন্যতম সফল কোচ প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বা পিকে। সেবার ঘরোয়া লীগের বড় ম্যাচের অপ্রত্যাশিত পরাজয় এবং ফেডারেশন কাপ ফাইনালে ভালো খেলেও অল্পের জন্য হেরে যাওয়ার ধাক্কা সামলে মোহনবাগান দাপটে খেলে একে একে জিতে নেয় তিনটে ব্লু রিবন টুর্নামেন্ট – আইএফএ শিল্ড, ডুরান্ড, রোভার্স। তার মধ্যে শিল্ড ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ তোলাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই বছর মোহনবাগান একটি অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করে পেলে, আলবার্তো, চিনালিয়াদের মত বিশ্ববন্দিত তারকা সমৃদ্ধ নিউ কসমস ক্লাবের সাথে ইডেন গার্ডেন্সে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে ২-২ ড্র করে। বলা বাহুল্য, ফুটবল সম্রাট পেলের জন্যই ইডেনে সেদিন ভিড় উপচে পড়েছিল, ভারত সহ গোটা ফুটবল দুনিয়ার নজর ছিল ওই ম্যাচের দিকে। সুদক্ষ ক্যাপ্টেন সুব্রত কিন্তু সবসময় শ্যাম, শিবাজি, হাবিব, ভৌমিকদের মত অভিজ্ঞ সতীর্থদের সাথে আলোচনা করেই দল পরিচালনা করতেন। এক দুর্দান্ত মরসুম শেষে ক্লাব প্রাঙ্গণে মোহনজনতার উদ্দেশ্যে শোভিত হয়েছিল সেই ত্রিমুকুট, সাথে ফেড কাপ রানার্স-আপ ট্রফিও। ঐতিহ্যশালী লনে হয়েছিল ক্লাব সচিব ধীরেন দে এবং সেবারের দলগঠনের অন্যতম কাণ্ডারি আর কে তেওয়ারি সহ পুরো স্কোয়াডের ফটোসেশন।  

 

 

 

Branding? Merchandise? Well, the name of the institution was all enough even long back in the decade of 1910s

১৯১১ সালে খালি পায়ে খেলে ব্রিটিশদের হারিয়ে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয় ভারতীয় ফুটবলের প্রথম বড় সোপান, সে কথা তো সবারই জানা। তবে মাঠের বাইরেও তার সামাজিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। একদিকে, ওই জয় যেমন আসমুদ্রহিমাচল পরাধীন দেশের মানুষের মনে জ্বালিয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের অনির্বাণ অগ্নিশিখা, তেমনি অন্যদিকে নিজেরা স্বদেশী বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রস্তুত করে তা ব্যবহার করার দিকে ঝোঁক বাড়তে থাকে বিলেতি পণ্য বর্জন করে। “মোহনবাগান” নামটার প্রাতিষ্ঠানিক প্রতাপ এবং মাহাত্ম্য তখন এতটাই যে, নানা বাঙালি সংস্থা তাদের উৎপাদিত দ্রব্যের বাড়তি কাটতির জন্য নামটা ব্যবহার করত। এমনই জনপ্রিয় এক পণ্য ছিল ঊষা ম্যাচ কোম্পানির ‘মোহনবাগান দেশলাই’। ভাবা যায়, সে যুগেও স্বদেশপ্রেম জনসাধারণের হেঁশেলে ঢুকিয়ে দেবার সাথে সাথে কি চমৎকার বিপণনি কৌশল নেওয়া হত! নীচে রইল ক্যাপশন সহ সেই বিরল ছবি ‘চিরকালের মোহনবাগান’ পুস্তক থেকে। 


 

Sneak pick into 1964 Platinum Jubilee celebration :: European Giants 'Tatabanya' as visitors to the club

১৯৬৪ প্লাটিনাম জুবিলী উদযাপনের অংশ হিসেবে হাঙ্গেরির তাতাবানিয়া ফুটবল ক্লাবের অধিনায়ক হেইটনির সঙ্গে ম্যাচের আগে স্মারক বিনিময় করছেন মোহনবাগানের ক্যাপ্টেন চুনী গোস্বামী। সেই সময় ইউরোপিয়ান ফুটবল-আঙিনায় তাতাবানিয়া বেশ বড় নাম। ‘৬৪-রই অলিম্পিয়ান এবং ‘৬৬র বিশ্বকাপার জোসেফ গেলী ছিলেন সেই দলের গোলরক্ষক, পরবর্তীকালে ‘৯০-৯১তে উনি ভারতের জাতীয় দলের কোচও হন। এহেন তাতাবানিয়ার বিপক্ষে নিজেদের নতুন মাঠেই আয়োজিত একটি প্রদর্শনী ম্যাচে মোহনাবাগান ০-৩ ব্যবধানে পরাজিত হলেও সফরকারী দলের কাছে অশোক চ্যাটার্জি সহ বেশ কজন খেলোয়াড় প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।

 

15th November :: Surely, a "Red-letter Day" in club's history

স্বাধীনতার পর প্রথমবার, তথা মোহনবাগান ক্লাবের ইতিহাসে দ্বিতীয় আইএফএ শিল্ড জয় এসেছিল ১৯৪৭ সালে। প্রথম ডুরান্ড জয় এলো ১৯৫৩ সালে এবং প্রথমবার রোভার্স ১৯৫৫ সালে। কাকতালীয়ভাবে, দেশের তৎকালীন ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি এই তিনটে ব্লু-রিবন টুর্নামেন্ট জয়লাভের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি বিশেষ তারিখ, ১৫ই নভেম্বর। এই প্রতিটি টুর্নামেন্টেই ক্লাব বহুবারের চেষ্টার পর মোহনবাগান সাফল্যের খরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় ওইদিন। নীচে রইল যথাক্রমে সেই তিনটি ফুল স্কোয়াডের ট্রফি নিয়ে ছবি।

 


 

Historic Match: Mighty "Crook Town" ends up with a draw against Mohun Bagan

‘১৯৭৬-এর গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডের একটি অপেশাদার বা অ্যামেচার ফুটবল দল ক্রুক টাউন এএফসি এসেছিল ভারত সফরে। দলটি ছিল ইংল্যান্ডের পাঁচবারের অ্যামেচার এফএ কাপ চাম্পিয়ন। ভারতে সাকুল্যে চারটে ম্যাচ খেলেছিল। ৪ঠা মে ইডেন গার্ডেন্সে কানায় কানায় পরিপূর্ণ গ্যালারির সামনে মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগানের। ম্যাচটি ১-১ গোলে শেষ হয়। মোহনবাগানের পক্ষে গোল করেন সেদিন ‘ছোটে মিয়াঁ’ আকবর। মোহনবাগানের পক্ষে ম্যাচে নজর কেড়েছিলেন হাফ সমরেশ (পিন্টু) চৌধুরী এবং ফরোয়ার্ডে ‘বড়ে মিয়াঁ’ হাবিব। বস্তুত, ওই ‘৭৬এই একটিমাত্র মরসুম পিন্টু খেলেন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে। মোহনাবাগান অধিনায়ক গোলকিপার প্রশান্ত মিত্রের সাথে ক্রুক ক্যাপ্টেন চার্লি গটের সৌজন্য বিনিময় করে বিপুল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ম্যাচটি সম্পন্ন হয়। ধরা রইল ম্যাচের সেই কিছু বিশেষ মুহূর্ত। হাবিবের গোল করে ব্যবধান বাড়ানোর প্রয়াসের ছবির জন্য ঋণস্বীকার করছি একনিষ্ঠ মোহনাবাগান সমর্থক প্রদীপ মুখার্জির কাছে। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ওই সফরে ক্রুক টাউন দলের চিকিৎসক হয়ে এসেছিলেন বিলেত-প্রবাসী বাঙালি ডাঃ অরুণ কুমার ব্যানার্জি। 

The ever-watchful last line of defence - Balai Dey 

অত্যন্ত বিরল এক নজিরের অধিকারী বলাই দে। দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং পাকিস্তানের জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন উনি। ‘৬৪তে পাকিস্তানের হয়ে এশিয়ান গেমসে দুরন্ত পারফর্ম করে ‘ফ্লাইয়িং বার্ড’ আখ্যা পান। পরবর্তীকালে ভারতের হয়ে মারডেকা কাপে চমৎকার খেলে ‘দ্য রক’ বলে খ্যাত হন। ১৯৬৮-৭১ টানা চার মরসুম উনি মোহনবাগানের দুর্গরক্ষা করেছিলেন সুনামের সঙ্গে। এরিয়াল বলে উনি ছিলেন কার্যত দুর্ভেদ্য। সেরকমই এক মুহূর্ত লেন্সবন্দি রইল কলকাতা লীগে মোহনবাগানের একটি ম্যাচ থেকে। ‘২০২২ সালের মোহনবাগান দিবসে ক্লাব তাঁকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড বা জীবনকৃতী সম্মানে ভূষিত করে।

A significant Durand Cup victory edging past Inder's JCT in '77

১৯৭৭এর ত্রিমুকুট জয়ের মধ্যে ডুরান্ড ফাইনাল জিততে খানিকটা বেগ পেতে হয়েছিল সুব্রত ভট্টাচার্যের মোহনবাগানকে। নির্ধারিত ফাইনালের দিন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব মোহনবাগান ও ফাগোয়ারার জগজিৎ কটন মিলসের (জেসিটি) খেলা ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকে। রিপ্লে ফাইনাল হয় ইংরেজি বর্ষের শেষদিন অর্থাৎ, ৩১শে ডিসেম্বর। জেসিটি দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং কুশলী ফরোয়ার্ড ইন্দর সিং তখন যে কোন প্রতিপক্ষ দলের ডিফেন্সের কাছেই ত্রাস। দিল্লির হাড়কাঁপানি শীতের বিকেলেও ইন্দর চেষ্টা করে গেলেন বাগান রক্ষণে ঘাম ছোটাতে, কিন্তু মোহনবাগানের সেদিনের টিমগেমের কাছে হার মানলেন। মোহনবাগান রিপ্লে ফাইনাল জিতে নেয় ২-১ গোলে। ছবিতে দেখছি, ইন্দরকে চমৎকার ট্যাকলে বল বের করে বিপন্মুক্ত করছেন মোহনবাগানের প্রদীপ চৌধুরী (জেঠু), আর তাঁকে সহায়তা করছেন গৌতম সরকার।

'Bablu' Ganguly used to have a 'princely' presence on pitch

চোটের কারণে প্রণব গাঙ্গুলির ফুটবল কেরিয়ার হয়ত খুব বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি। কিন্তু অল্প ক’দিনের মধ্যে উনি মোহনজনতার মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নেন। সুদর্শন চেহারা, গৌরবর্ণ, মোটামুটি ভালোই উচ্চতা সবমিলিয়ে ওনাকে মাঠে লেফট-আউট খেলার সময় চিনে নিতে অসুবিধে হত না। শোনা যায়, তাঁর সময়ে তিনিই নাকি ছিলেন একমাত্র মোহনবাগান ফুটবলার, যিনি নিজের ফিয়াট গাড়ি চড়ে হাওড়ার শিবপুরের বাড়ি থেকে ক্লাবের প্র্যাক্টিসে আসতেন। আক্ষরিক অর্থেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘প্রিন্স’ বা রাজপুত্র। তাঁর ফুটবলশৈলীও ছিল নজরকাড়া। একদিকে ছিল যেমন লম্বা থ্রো, যা সেই যুগে বিশেষ একটা দেখা যেত না, অন্যদিকে ছিল তাঁর বাঁপায়ে গোলার মত নির্ভুল নিশানায় শট, সাথে লেফট উইং ধরে ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়। ১৯৬৯এর কলকাতা লীগের সেই বিখ্যাত ৩-১ মার্জিনে জয়ের বড় ম্যাচে প্রণব গাঙ্গুলি নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিলেন বিপক্ষের সর্বকালের অন্যতম সেরা রাইট ব্যাক সুধীর কর্মকারকে। সুব্রত ভট্টাচার্যের আগে মোহনবাগান খেলোয়াড়দের মধ্যে ওনারই ডাকনাম ছিল ‘বাবলু’। মোহনবাগানের সিনিয়র দলে উনি খেলছেন ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৪ অবধি। অবসর নেবার বহুবছর পরেও প্রাণখোলা প্রণব গাঙ্গুলিকে পাওয়া যেত মোহনবাগান তাঁবুর নিয়মিত বৈকালিক আড্ডায়। দলের নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। সিসিএফসি এবং ডালহৌসী ক্লাবের সঙ্গে পরবর্তীকালে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ ছিল। ছবিতে দেখছি, ১৯৬৯এর আইএফএ শিল্ড সেমিফাইনালে পোর্ট ট্রাস্টের গোলরক্ষককে ধরাশায়ী করে তিনি গোল লক্ষ্য করে শট নিচ্ছেন, পাশে দেখছেন সতীর্থ সিতেশ দাস।

Ashim Moulik - The goal machine of the 60's

ময়দানের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ডদের নিয়ে আলোচনা হলে অসীম মৌলিকের কথা মনে হয় একবার আসবেই। ‘১৯৬৬-৬৭ একটিমাত্র মরসুম উনি গায়ে সবুজ-মেরুন জার্সি চাপিয়েছিলেন। ‘৬৬র কলকাতা লীগে তিনিই হয়েছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা, ২৬ ম্যাচে ২৮ গোল করে। সেই দলে চুনী গোস্বামীর মত দিকপাল সতীর্থের রোশনাইয়ের পাশে তাঁর পারফর্মেন্স কিন্তু ম্রিয়মান লাগেনি। একটা ছবিতে দেখছি, মৌলিক জোরালো গোলমুখী শট নিচ্ছেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কোনরকম সুযোগ না দিয়ে।

The "National Club" for a reason

সেই ‘১৯১১তে খালি পায়ে খেলে ব্রিটিশদের হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জয়ের মাধ্যমে ভারতীয় ফুটবলের পথপ্রদর্শক হয়ে আবহমান কাল ধরে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান রেখে এসেছে মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব। জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টগুলোয় সর্বাধিক সাফল্য লাভ করে দেশের ফুটবলের মুখ হিসেবে মোহনবাগানই বিশ্বদরবারে বন্দিত, সমাদৃত হয় ভারতের ‘ন্যাশনাল ক্লাব’ বা ‘জাতীয় ক্লাব’ বলে। স্বভাবতই, এই ক্লাবের সেরা খেলোয়াড়দের কাঁধেই বর্তে এসছে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টগুলোয় দেশকে নেতৃত্ব দেবার ভার। যেমন, ‘১৯৪৮এ ভারত যেবার অলিম্পিক্স গেমসে ভারত প্রথম অংশ নিল ফুটবলে, ভারতের অধিনায়ক ছিলেন মোহনবাগানের তালিমেরান (টি) আও। এরপর ‘১৯৫২ এবং ‘১৯৫৬ সালেও অলিম্পিক্সে ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক হন মোহনবাগান থেকে যথাক্রমে শৈলেন মান্না এবং সমর (বদ্রু) ব্যানার্জি। এর আগে ‘১৯৫১এর প্রথম এশিয়ান গেমসেও সোনাজয়ী ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন মান্না। তারপর ভারতের ফুটবলের শেষ বড় সাফল্য হিসেবে যা পরিচিত, সেই ‘১৯৬২র জাকার্তা এশিয়াডে ফুটবলে সোনাজয়ী ভারতের ক্যাপ্টেন হন ফের এক মোহনবাগানের কিংবদন্তী সুবিমল (চুনী গোস্বামী। এক ফ্রেমে ধরা পড়েছিল দেশের সেই চার স্বনামধন্য ‘মোহনবাগানী দলনায়ক’ ক্লাবের প্ল্যাটিনাম জুবিলী অনুষ্ঠানে। বাঁদিক থেকে বদ্রু, আও, মান্না, চুনী।

Fantastic Far-east tour; interesting inclusion: PK Banerjee

বিদেশে বন্ধুত্বপূর্ণ বা প্রীতি ম্যাচ খেললে টিমের মধ্যে সংহতি এবং প্রতিযোগিতার মনোভাব দুটোই তৈরি হয়, সেটা কিন্তু সেই সাবেকি মোহনাবাগান ম্যানেজমেন্ট বিলক্ষণ বুঝত। বেশ কিছু দুর্দান্ত বিদেশ সফর নিয়ে আলোচনা করতে বসলে একদম প্রথম সারিতেই রাখতে হবে ‘১৯৫৬ সালের ফার-ইস্ট ট্যুর বা দূর-প্রাচ্য সফর। ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং সব দেশেই চমৎকার ফুটবলের সাক্ষর রেখে ক্লাব এবং দেশের সম্মান বজায় রেখেছিল মোহনাবাগান। ইন্দোনেশিয়ার মাটিতে আবার খালি পায়ে খেলে দুর্ধর্ষ ফুটবল নৈপুণ্যের নিদর্শন রেখে অনাবাসী ভারতীয় সভ্যদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। পরপর সাজানো ছবির প্রথমটিতে আমারা দেখছি, সেই ট্যুরের ফুল স্কোয়াড দমদম বিমানবন্দরে ঠিক যাত্রার পূর্বে, দলে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন প্রদীপ কুমার ব্যানার্জি, অর্থাৎ পিকে (বসে বাঁদিক থেকে দ্বিতীয়)। পিকে তাঁর প্লেয়িং কেরিয়ারে ওই একটিমাত্র সফরেই গায়ে চাপিয়েছিলেন সবুজ-মেরুন জার্সি। তিনি শুধু খেলেছিলেন তা নয়, কেষ্ট পালের পর ওই সফরে মোহনবাগানের পক্ষে তিনিই হয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। এরপর ক্লাব তাঁকে বারবার দলে নিতে চাইলেও ইস্টার্ন রেলের হয়েই তিনি খেলে গেছেন রেলের চাকরির বিধিনিষেধ মেনে। তবে পরবর্তীকালে মোহনবাগানের কোচ হিসেবে উনি চুড়ান্ত সফল হন। হংকংয়ের মাঠে পিকের সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে ডানদিক থেকে আক্রমণ শানানোর একটি বিরল মুহূর্ত ধরা রইল দ্বিতীয় ছবিতে। তৃতীয় ছবিতে চূনীকে দেখা যাচ্ছে, গতি এবং স্কিলে সিঙ্গাপুর একাদশের এক ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে গোল করতে চলেছেন। চতুর্থ ছবিটির মূল্য অপরিসীম। বিশিষ্ট সমর্থক শ্রীযুক্ত শৌভিক দে মহাশয় চমৎকার হাতে লেখা পরিসংখ্যানের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং হংকং সফরের ম্যাচগুলোর ফলসহ গোলদাতাদের নাম তুলে ধরেছেন বেশ কয়েক বছর আগে।

Success in cricket adds to the festive vibe of the Platinum jubilee

‘১৯৬৪ সালে মোহনবাগানের বর্তমান ময়দান টেন্ট প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৭৫ দিন ব্যাপী ক্লাবের ৭৫ বর্ষপূর্তি উৎসব বা প্ল্যাটিনাম জুবিলী। সেই আনন্দোৎসবের মেজাজে আলাদা মাত্রা  যোগ করেছিল সেবার ফুটবল, হকি, ক্রিকেট প্রতিটি বিভাগেই ক্লাবের দুর্দান্ত সাফল্য। ঘরোয়া ক্রিকেটে ওই ‘১৯৬৪-৬৫ মরসুমে এসেছিল দ্বিমুকুট – সিএবি লীগ এবং নক-আউট। এই দুটি টুর্নামেন্টে দলের জয়ের ক্ষেত্রে অর্থবহ ভূমিকা পালন করেন ক্রিকেটার চুনী গোস্বামী, যিনি ফুটবলেও সেবার যথেষ্ট ভালো পারফর্ম করেছিলেন ক্লাব এবং দেশের হয়ে। নীচে রইল ট্রফি সহ সেই সফল ক্রিকেট টিমের ফুল স্কোয়াডের ফটো ক্লাবের প্ল্যাটিনাম জুবিলী স্যুভেনির থেকে। চুনীকে দেখতে পাচ্ছি, দ্বিতীয় সারিতে বসে আছেন ডানদিক থেকে তৃতীয়।

A forgotten giant of the south - Hyderabad Police

কলকাতা যেমন ভারতীয় ফুটবলের মক্কা, হায়দ্রাবাদও তেমনি একদা ফুটবলের এক বড় পীঠস্থান ছিল। রহিম সাহেবের মত চিরস্মরণীয় কোচ সহ দুর্ধর্ষ সব খেলোয়াড়রা উঠে এসেছেন নিজামের শহর থেকে – ইউসুফ খান, বলরাম, থঙ্গরাজ, নঈম, হাবিব, লতিফ, সাব্বির, অমলরাজ এবং আরো অনেকে। অধিকাংশ ফুটবলারদেরই পাদপ্রদীপের আলোয় আসা ওখানকার হায়দ্রাবাদ পুলিশ নামক এক ক্লাব থেকে। পরে ওই টিমটাই পরিচিত হয় অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ নামে। দলটি রোভার্স চাম্পিয়ন হয় ন’বার এবং ডুরান্ড চাম্পিয়ন হয় চারবার। স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতবর্ষে দুই নাম মিলিয়ে ক্লাবটার নজরকাড়া দাপট ছিল প্রায় চার দশকের কাছাকাছি। এখন কার্যত বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া হায়দ্রাবাদ শহরের সেই ফুটবল ঐতিহ্য সম্পর্কে সামান্য ধারণা পেতে আজ একবার দেখে নিই, অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের জার্সি গায়ে সৈয়দ নঈমুদ্দিনকে বল দখলের লড়াই করতে মোহনাবাগানের জার্সি গায়ে কুশলী খেলোয়াড় সুকুমার সমাজপতির সঙ্গে, ‘৬৭র আইএফএ শিল্ডের একটি ম্যাচে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন মোহনবাগানের অমল চক্রবর্তী।

Tarun Bose: Immense courage, terrible reflex; the favourite of many 

কেউ বলে, গোলকিপাররা সারা মাঠ দেখতে পায় বলে নাকি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়। আবার কেউ বলে, বিপক্ষের সব আক্রমণ সারাক্ষণ প্রতিরোধ করতে করতে গোলকিপাররা নাকি একটু ক্ষ্যাপাটে হয়ে যায়। মোটমাট, ফুটবলের যে কোন আড্ডায় বর্ণময় চরিত্রের গোলরক্ষকদের বারেবারে আসেই। তেমনি কলকাতা ময়দানের ষাট-সত্তরের বর্ণময় গোলরক্ষক বলতে তরুণ বোসের নাম উঠবে। দুরন্ত রিফ্লেক্স, ফিটনেস, স্কিল, অনুমানশক্তি, সদা-সজাগ থাকার ক্ষমতা আর অকুতোভয় মনোভাব তরুণ বোসকে অন্যদের থেকে বোধহয় একটু আলাদা করে দিত। সেই সময় যাঁরা ময়দানে নিয়মিত খেলা দেখতেন, তাদের অনেকের কাছেই এখনো তিনি যেন ‘চির-তরুণ’ হয়ে রয়ে গেছেন। কারো মতে, তিনিই নাকি সর্বকালের সেরা; অনেক দুরূহ বল বডি স্ট্রেচ করে এক আঙুলে নামিয়ে নিতে পারতেন। কয়েকবছর তাঁর মাথায় টুপি পরে কিপিং করার কথাও যথেষ্ট চর্চিত হয়। প্রথম ছবিতে দেখতে পাচ্ছি, মোহনবাগানের জার্সিতে তরুণ বোস ‘৭৩ বা ‘৭৪এর কলকাতা লীগের কোন এক বড় ম্যাচে শূন্যে উঠে একটি বিপজ্জনকভাবে ভেসে আসা বলকে তালুবন্দি করছেন আর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছেন প্রতিপক্ষের দুই ফরোয়ার্ড হাবিব এবং ভৌমিক। দ্বিতীয় ছবিতে ‘৭৩এ কলকাতা লীগের বড় ম্যাচে টুপি পরিহিত তরুণকে দেখছি দুরন্ত প্রয়াসে ভৌমিক আর আকবরের সামনে থেকে যেন গ্রাস কেড়ে নিচ্ছেন।

P. Burman - an epitome of discipline, dedication and courage

চুনী, জার্নেলদের সতীর্থদের মধ্যে যে নামগুলি এখনো আলোচিত হয়, তাঁদের অন্যতম গোলরক্ষক প্রদ্যুত বর্মণ বা পি বর্মণ। অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং একাগ্রতার সঙ্গে দুহাত দিয়ে মোহনবাগানের দুর্গ আগলে রেখেছিলেন টানা বেশকিছু বছর। ভারতের জাতীয় দলের হয়েও অনেক স্মরণীয় জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দুর্দান্ত শৃঙ্খলা, অসীম সাহস আর শক্তপোক্ত চেহারার জন্য তিনি ছিলেন কোচদের কাছে প্রথম একাদশের প্রথম পছন্দ। ছবিতে আমরা দেখছি, কলকাতা লীগের মোহনবাগান বনাম ইস্টার্ন রেলের একটি ম্যাচে মোহনবাগানের পি বর্মণ শূন্যে উঠে একটি বিপজ্জনক ভাবে ভেসে আসা বলকে ফিস্ট করে ক্লিয়ার করছেন, গার্ড দিচ্ছেন জার্নেল, আর পুরো ঘটনার দিকে তাকিয়ে দেখছেন প্রতিপক্ষের পিকে ব্যানার্জি এবং তাঁর এক সতীর্থ।

ARUN SINHA: A forgotten legend

এখন তো প্রায় সব বড় তথা প্রতিষ্ঠিত ফুটবল দলের কোচ বিদেশী। অথচ, একসময় টিমকে যে একজন প্রশিক্ষিত প্রশিক্ষক বা কোচ রাখতে হবে, সেই কন্সেপ্টটাই ময়দানে বিশেষ ছিল না। দলের যাঁরা সিনিয়র বা প্রাক্তন তারকা, তাঁরাই কার্যত দায়িত্ব নিতেন টিমের প্লেয়ারদের পরিচালনার। চল্লিশ, পঞ্চাশ দশকগুলোয় তাই বলাইদাস চ্যাটার্জি, করুণা ভট্টাচার্য, ল্যাংচা মিত্র কিংবা গোষ্ঠ পাল, উমাপতি কুমার, দরবারি দত্তরাই একটা বাঁধা গতে মোহনবাগানের দল সাজাতেন এবং খেলাতেন। অনুশীলন বলতে ছিল কিছু শারীরিক কসরত আর কয়েক চক্কর দৌড়, আর বড়জোর কিছু শট প্র্যাক্টিস। তখন টিমের বিন্যাস হত ২-৩-৫। ১৯৫৯ সালে ক্লাবের শীর্ষকর্তা ধীরেন দের কিছুটা আকস্মিক আহ্বানেই মোহনবাগানে কোচ হয়ে আসেন ক্লাবের প্রাক্তন সেন্টার ফরোয়ার্ড অরুণ সিনহা। ময়দানের অধিকাংশের কাছেই তিনি পরিচিত ছিলেন ‘দুদু দা’ নামে, এখনকার প্রজন্ম তাঁর নামই হয়ত শোনেনি।

তিনি গোড়া থেকেই বাকিদের সকল আপত্তি সত্ত্বেও ওই পুরনো ছক ভেঙে তিন ব্যাক সিস্টেমে অর্থাৎ, ৩-২-৫ ফর্মাটে দলকে খেলাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। সাফল্য আসতে একটু সময় লাগলেও দেখা গেলো ওই বৈপ্লবিক সিস্টেম দারুণ কার্যকরী হল। মান্ধাতার কোচিং পদ্ধতি ঝেড়ে ফেলে বিদেশী কোচদের থেকে কোচিঙয়ে ডিপ্লোমা পাস করা দুদু দা ক্লাবে আমদানি করলেন আধুনিক মানের ট্রেনিং। ‘৫৯-৬৫ তাঁর হাত ধরে মোহনবাগানের ফুটবল বিভাগে সাফল্যের জোয়ার এলো। তার মধ্যে ‘৬৩-৬৫ ডুরান্ড কাপের হ্যাট্রিক এবং ‘৬৩-৬৫ টানা চারবার কলকাতা লীগ জয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আইএফএ শিল্ড সহ অধিকাংশ ঐতিহ্যশালী টুর্নামেন্টেই মোহনাবাগান চাম্পিয়ন হয়েছিল, রোভার্স রানার্স একবার। তাঁর হাতে পড়ে ওই তিন ব্যাক সিস্টেমের মধ্যমণি জার্নেল সিং মোহনবাগান তো বটেই, ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হয়ে ওঠেন। ‘৫৯এরই ঘরোয়া লীগের বড় ম্যাচে ওই নবাগত জার্নেলের দাপুটে ডিফেন্সে ভর করেই মোহনাবাগান দুর্দান্ত খেলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে। তারপর অরুণ সিনহা বা জার্নেল, কাউকেই আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরবর্তীকালে, ‘৭৩-৭৪এও ক্লাবে তিনি সাফল্য এনে দিয়েছিলেন ডুরান্ড জিতে এবং শঙ্কর ব্যানার্জির মত নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডারকে তৈরি করে। ‘৮৮তেও তিনি কিছুটা সময় ক্লাবে প্রশিক্ষণে যুক্ত ছিলেন। জাতীয় দলের কোচের ভূমিকাতেও তাঁকে পাওয়া গেছিল মাঝের কিছু বছর। 

নিজের খেলোয়াড় জীবনে অরুণ সিনহা ছিলেন একজন সাহসী এবং নিপুণ সেন্টার-ফরোয়ার্ড। ‘১৯৪৭এর মোহনবাগানের দ্বিতীয় শিল্ড জয়ের পথে সেমিফাইনালে তাঁর হেড করা একমাত্র গোলেই হার মানে সেই সময়ের দুর্ধর্ষ প্রতিপক্ষ মহামেডান। কিন্তু বারবার কিছু মারাত্মক চোটের শিকার হয়ে তাঁর ফুটবল কেরিয়ার দীর্ঘায়ু হয়নি। পরে তাঁর পায়েও কিঞ্চিৎ প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। কিন্তু জাত মোহনবাগানী বলে বারবারই ক্লাবের ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে এসেছেন। কোচ বা মেন্টর হিসেবে ছিলেন যেমন আধুনিকমনস্ক, ব্যক্তি হিসেবে তেমনি নিজের এথিক্স বজায় রাখতেন। প্রয়োজন পড়লে চুনী গোস্বামী বা বাবলু ভট্টাচার্যর মত ক্লাবের ব্লু-আইড বয়দের প্রতিও কঠোর হতে পিছপা হননি। আবার প্লেয়ার্স-ম্যান হয়ে সবার সাথে বন্ধুর মত মিশেও গেছেন। তিনি ছিলেন সাইলেন্ট পারফর্মার, প্রচারবিমুখ। ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকেও তাঁকে কোন সম্মানপ্রদান করা হয়েছে বলে সঠিক জানা নেই। তাই নবীন মোহনবাগানী পাঠকরা খুব বেশি তাঁর কথা জানবে না, অন্তত অমল-পিকে-নঈমের নামডাকের নিরিখে তো বটেই। সুতরাং আমার প্রয়াস এই কাহিনী এবং নীচের ছবিগুলো তাদের কাছে তুলে ধরে অরুণ সিনহার মত এক বিস্মৃত কিংবদন্তীর ব্যাপারে জ্ঞাত করা। 

নীচের ছবিগুলোয় তাঁর স্বগতোক্তির সাথে তাঁকে দেখা যাচ্ছে জার্নেল, বাবলু, শ্যাম, শিশিরদের সাথে বিভিন্ন ছবিতে। এছাড়াও রইল তাঁর নিজের বয়সকালের ছবি, তাঁর সেই যুগান্তকারী ৩-৫-২ বিন্যাসের টিম। তারপর ‘১৯৫৯এ তাঁর অধীনে প্রথম ডুরান্ড জয়ে তাঁকে দেখা যাচ্ছে একদম বাঁদিকে বসে এবং ‘১৯৬০এ কলকাতা লীগ বিজয়ী দলে তাঁকে একদম ডানদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে। 

আংশিক তথ্য এবং চিত্র ঋণ – ‘সোনার ফ্রেমে মোহনবাগান’, উইকিপেডিয়া

   

1969: A year of massive success and unparalleled achievement

সাধারণ কোন মোহনবাগানীকে ১৯৬৯ নিয়ে প্রশ্ন করলেই বলবে, সেবার অমল দত্তের কোচিঙে দলের দুর্দান্ত ফুটবল প্রদর্শনীর কথা, ভবানী রায় আর আলতাফের ওভারল্যাপিং-এর কথা, পড়শী প্রতিপক্ষকে ৩-১ ব্যবধানে প্রণব গাঙ্গুলি, সুকল্যাণ ঘোষদস্তিদার দিয়ে দুর্মুষ করার কথা। কিন্তু একটা নজির সৃষ্টিকারী কীর্তির কথা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আলোচনায় ওঠে না, যে সেই বছর আমাদের ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এবং অ্যাথলেটিক্স সব বিভাগেই এসেছিল চুড়ান্ত সাফল্য, ঘরোয়া সবকটা চাম্পিয়নশিপ ট্রফি এসেছিল গঙ্গাপারের তাঁবুতে। আর হ্যাঁ, এই অনন্য কৃতিত্ব আরো কোন দলেরই সেইসময় ছিল না। রইল সেই দুর্দান্ত গর্বিত মুহূর্তের চিত্র ‘সোনার ফ্রেমে মোহনবাগান’ থেকে।

 

Garden party hosted by Mohun Bagan

তিরিশ, চল্লিশের দশকের মোহনবাগান ক্লাবের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হত গার্ডেন-পার্টি বা বাগান সমবেতোতসব। খেলোয়াড়, কর্তা, সদস্য সকলে একসাথে মিলেমিশে একটা বনেদী একান্নবর্তী পরিবারের মত সারাদিন আনন্দ করতেন, কিন্তু আলাদা তার জন্য চাঁদা নেওয়া হত না। ক্লাবের ফান্ড থেকেই এই উদ্যোগের যাবতীয় খরচ জোগানো হত, এমনটাই জানা যায় প্রখ্যাত ক্রীড়া-ঐতিহাসিক শিবরাম কুমারের লেখা থেকে। রইল তিরিশের দশকের তেমনই এক বিরল ছবি।